
লোকাল গার্মেন্টস শিল্প কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে?
বাংলাদেশের লোকাল গার্মেন্টস শিল্প, বিশেষ করে পাঞ্জাবি, পায়জামা ও ট্রাউজার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এখনো এটি দেশের বৃহৎ শিল্প খাতগুলোর মধ্যে স্বীকৃতি পায়নি। অথচ এই খাতটি এমন একটি শিল্পখাত যেখানে প্রতি বছর ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ, শীত মৌসুমসহ নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন বাজার যেমন ঢাকার কেরানিগঞ্জ, বঙ্গবাজার, নিউ মার্কেট, গুলিস্তান, চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজার, সিলেটের কালিঘাট কিংবা গাজীপুর-নারায়ণগঞ্জের শত শত উৎপাদন কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক লোকাল পাঞ্জাবি ও ট্রাউজার তৈরি হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এসব পোশাকের বিপণনে জড়িত থাকে হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, খুচরা বিক্রেতা, অনলাইন উদ্যোক্তা এবং ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স উদ্যোক্তারা, যারা সবাই মিলে একটি শক্তিশালী লোকাল পোশাক শিল্পের ভিত্তি গড়ে তুলেছে।
তবে এই খাতটির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে—মানের অভাব, ব্র্যান্ডিং ঘাটতি, প্রযুক্তির পিছিয়ে থাকা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। বেশিরভাগ উদ্যোক্তা প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না নিয়েই ব্যবসা শুরু করেন, যার ফলে ডিজাইন ও ফ্যাশন ট্রেন্ডে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকায় উৎপাদনের খরচ বেশি পড়ে এবং আন্তর্জাতিক মানের গুণগত মান বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় পণ্যের ডিজাইন কপি বা সাধারণ মানসম্পন্ন হওয়ায় এটি বড় বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। এছাড়া অনলাইন বিক্রির ক্ষেত্রে লজিস্টিক ও পেমেন্ট সিস্টেমে সীমাবদ্ধতা থাকায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সহজে বিস্তার ঘটাতে পারেন না।
এই শিল্প খাতকে এগিয়ে নিতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রথমত, উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও টেকনিক্যাল সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে—বিশেষ করে ফ্যাশন ডিজাইন, কাপড়ের মান, সেলাই ও ফিনিশিংয়ের ওপর। দ্বিতীয়ত, স্বল্প সুদে সহজশর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মূলধন সঙ্কট দূর করা যেতে পারে। তৃতীয়ত, একটি জাতীয় পর্যায়ের লোকাল গার্মেন্টস ব্র্যান্ডিং ক্যাম্পেইন চালু করে দেশজুড়ে স্থানীয় পণ্যের প্রতি ক্রেতার আস্থা তৈরি করা দরকার। চতুর্থত, সরকার ও প্রাইভেট খাতে যৌথভাবে লোকাল গার্মেন্টসের জন্য এক্সিবিশন, ট্রেড ফেয়ার এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেস তৈরি করতে হবে, যেখানে উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য সহজে উপস্থাপন করতে পারবেন।
সবশেষে বলা যায়, লোকাল গার্মেন্টস শিল্প পিছিয়ে পড়া কোনো খাত নয়—বরং এটি একটি ‘ঘরে বসে লুকানো সম্ভাবনা’, যা সঠিক সহযোগিতা পেলে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পূরণ করে শুধু জাতীয় অর্থনীতিই শক্তিশালী করবে না, বরং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক পোশাকের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।